রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বাউফলে মায়ের সাথে খেলতে গিয়ে ছিটকে পড়ে শিশুর মৃত্যু কুয়াকাটায় চলছে ৩দিন ব্যাপী রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জলকেলি উৎসব সিদ্দিক সভাপতি, মিজান সম্পাদক। মহিপুর থানা যুবদলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত গৃহবধূ হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে কুয়াকাটায় মানববন্ধন গৌরনদীতে চোর সন্ধেহে গনপিটুনিতে আহত যুবকের দুইদিন পর মৃত্যু কুয়াকাটায় আগুনে পোঁড়া বন পরিদর্শন কলাপাড়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষককে অব্যাহতি সড়ক সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল বাড়িতে ছাগল ঢোকাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর সংঘর্ষ, আহত-৪ বরিশালে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ বরিশালের জেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে উৎস করের নির্ধারিত ফি কম নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করার প্রমান পেয়েছে দুদক কলাপাড়ায় কৃষকদের অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদান কলাপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি কার্যালয়সহ ৫টি দোকান ভস্মীভূত কলাপাড়ায় ইউনিয়ন বিএনপির বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বাউফলে সড়ক সংস্কারের দাবিতে স্থানীয়দের মানববন্ধন
নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের বিলম্বে বাড়তে পারে সংক্রমণ

নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের বিলম্বে বাড়তে পারে সংক্রমণ

Sharing is caring!

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে দক্ষিণাঞ্চলে। গোটা বরিশাল বিভাগজুড়ে এরইমধ্যে চার হাজার ছাড়িয়েছে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা শতকের কাছাকাছি।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বিভাগে প্রথম রোগী শনাক্তের দিন থেকে ৯৫তম দিন গত সোমবার (১৩ জুলাই) সকাল পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ১৩০ জনে। করোনা পজিটিভ ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শনাক্তের তথ্য বিশ্লেষণ করলে বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৪৩ জন করোনা শনাক্ত হচ্ছেন। এ তথ্য শুধুমাত্র যতজনের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে ফলাফল পাওয়া গেছে তার ওপর ভিত্তি করে। যদি পরীক্ষার পরিমাণ প্রসারিত করা যেত তাহলে হয়তো আরও সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মত খোদ শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমার্স চেইন রিয়েকশন (আরটি পিসিআর) ল্যাবের দায়িত্বরতদের।

এখানকার কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য গবেষকদের মতে, করোনার সংক্রমণ কমাতে হলে সঠিক সংখ্যাটা জানা জরুরি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে দ্রুত ল্যাব স্থাপন করা উচিত।

একই দাবি সাধারণ মানুষেরও। এরইমধ্যে ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী জেলায় মাঠ পর্যায়ে ল্যাবের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় সচেতন মহল। ল্যাব স্থাপনের দাবির কথা জোরালোভাবে উত্থাপন করে যাচ্ছেন বরগুনা ও পিরোজপুরের জনসাধারণও। যদিও সাধারণ মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে ভোলা জেনারেল হাসপাতালে গত ১৩ জুলাই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম।

জানা গেছে, বর্তমানে নমুনা সংগ্রহ কিছুটা কমলেও বিভাগে থাকা একটি পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিনের সবগুলো নমুনা পরীক্ষা সম্ভব না হওয়ায় রিপোর্ট পেতে প্রতিনিয়ত দু’দিন আবার অনেক ক্ষেত্রে তার অধিক সময় বিলম্ব হচ্ছে। আবার অনেক সময় নমুনাগুলো বিভাগের বাইরে ঢাকাসহ অন্য স্থানের ল্যাবেও পাঠানো হচ্ছে। আর তাতেও রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এতে করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ থাকা রোগীদের আলাদাভাবে আইসোলেটেড করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সৌরভ বলেন, প্রথম যে রোগীটা উপসর্গ নিয়ে আমাদের কাছে বা হাসপাতালে আসছে তাকে আমরা আইসোলেসন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করি। নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হলে যদি রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হয় তাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ আইসোলেশন ওয়ার্ডে পজিটিভ ও নেগেটিভ রোগী একত্রে থাকছে। দ্রুত তাদের আলাদা না করা গেলে নেগেটিভ রোগীও পরবর্তীতে সংক্রমিত হবেন। এক্ষেত্রে রিপোর্ট দ্রুত প্রয়োজন।

তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি বলছে বিভাগে ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৬৬ জন জনসংখ্যা রয়েছে। চলমান ২০২০ সালে অর্থাৎ নয় বছরে বিভাগে জনসংখ্যার পরিমাণ গিয়ে পৌঁছাতে পারে এক কোটিতে। সেই এক কোটি মানুষের জন্য মাত্র একটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে। পরিসংখ্যান বলছে, বরিশাল বিভাগে উপসর্গ নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন ২০ হাজারের মতো মানুষ। আর আইইডিসিআর-এর ১২ জুলাইয়ের তথ্যানুযায়ী শুধুমাত্র শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে ১৩ হাজার ৮৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সে হিসেবে বাকি নমুনাগুলো বিভাগের বাইরের ল্যাব থেকে করানো হয়েছে।

এদিকে ২০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে যদি চার হাজার ১৩০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। আর এ হিসেবে যারা পরীক্ষা করিয়েছেন সেই মানুষের মধ্যে ২০ শতাংশ লোক করেনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাহলে পরীক্ষার পরিসর বাড়ানো গেলে আক্রান্তের সংখ্যাটি বাড়তে পারে বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক খান মোশতাক আল মেহেদী। এক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়াটাও যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন তিনি।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানিয়েছেন, মহামারি থেকে বাঁচতে হলে নিজের সুরক্ষা নিজের কাছে। নিজে সুরক্ষিত না হলে এ মহামারি কাউকে ছাড় দেবে তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

হিসেব বলছে, বিভাগে মোট আক্রান্তের মধ্যে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৯০ জন সুস্থ হয়েছেন। যা আক্রান্তের ৩৮ শতাংশ। সুস্থতার হার মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও উপসর্গহীনভাবে কতোজন আক্রান্ত হয়েছেন তা কিন্তু পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আর দক্ষিণাঞ্চলের জন্য এটিই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয়।

এদিকে বিভাগে গত রোববার (১২ জুলাই) পর্যন্ত ৮৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর গড় হিসেব নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করে স্বাস্থ্য দফতর। কারণ মোট আক্রান্তের দুই শতাংশের কিছু বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন করোনায়।

বরিশাল বিভাগের মধ্যে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায় সর্বপ্রথম করেনা রোগী শনাক্ত হন। গত ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জফেরত যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার বোনও করোনা সংক্রমিত হন। কিন্তু প্রথম লকডাউন করা হয়েছিল বরিশাল জেলাকে। তার কারণও অবশ্য ভিন্ন। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণ ও আক্রান্তের হারের ওপর নির্ভর করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ছিল বরিশাল।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় জানিয়েছে, সর্বপ্রথম লকডাউন করা হয় গত ১২ এপ্রিল বরিশাল জেলাকে। এরপর গত ১৬ এপ্রিল ঝালকাঠি, ১৭ এপ্রিল পিরোজপুর, ১৮ এপ্রিল বরগুনা, ১৯ এপ্রিল পটুয়াখালী ও সর্বশেষ ২১ এপ্রিল ভোলা জেলাকে লকডাউন করা হয়।

যদিও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল। এতে এ অঞ্চলে করোনার বিস্তার ভয়াবহ রকমের ঘটে। তাই জোনভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বরিশালে এর কার্যকারিতা এখনও দেখা যায়নি।

সুত্র: Banglanews24

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD